৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ময়মনসিংহ নগরীতে ১২ এলাকার জলাবদ্ধতা, ভোগান্তি চরমে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:১৭ পিএম, ১ আগস্ট,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০১:১৬ এএম, ২ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
ময়মনসিংহে মাত্র তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর ১২টি এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে সড়কে জমে থাকা পানি উপচে পড়ে বাসা-বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে।
ফলে সড়কে চলাচলে বিড়ম্ভনার পাশাপাশি অনেক বাসা-বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পরায় ভুক্তভোগী এলাকাবাসির মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
আজ সোমবার বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।
এর মধ্যে পানিবন্দি এলাকাগুলি হল- নগরীর কলেজ রোড, ডিবি রোড, হামিদ উদ্দিন রোড, কৃষ্টপুর, ফুলবাড়ি বাইলেন, নন্দীবাড়ি, সাবেহ আলী রোড, নাটক ঘরলেন, সানকিপাড়া, গুলকীবাড়ি রোড, চরপাড়ার নয়াপাড়া, আউটার স্টেডিয়াম প্রমূখ। তবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ শুনিয়েছেন আশার বাণী। তারা বলেন, অনেক এলাকায় বর্তমানে ড্রেন ও সড়কের কাজ চলছে। আগামী বছরের মধ্যে এই সমস্যা আর থাকবে না।
জানা যায়, পুরো আষাঢ় মাসজুড়ে ময়মনসিংহে বৃষ্টির তেমন একটা দেখা না মিললেও শ্রাবণের ১৭তম দিনে সকাল ১০টা থেকে প্রায় দেড়টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে বারি বর্ষণ। এতে নগরীর প্রায় সবগুলো সড়ক অথৈ পানিতে ভেসে যায়।
এ সময় নগরীর সানকিপাড়া, জিলা স্কুল মোড়, গুলকীবাড়ী, নতুন বাজার, কৃষ্টপুর, চরপাড়া, গাঙ্গিনাপাড়াসহ নগরীর প্রায় সবগুলো সড়কে পানি জমে যাওয়ায় যান চলাচলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
এতে স্কুল শেষে বাসায় ফেরার পথে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও পড়েন ভোগান্তির মুখে। এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতেও দেখা গেছে যানবাহন গুলিতে।
খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন নগরীর নতুন বাজার এলাকার ট্রাফিক সদস্য মো: কিশোর। তিনি জানান, সকাল পৌণে দশটার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়ে দুপুর প্রায় দেড়টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে এই বৃষ্টি। এতে সড়কে পানি জমে যাওয়ায় কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে ঘন্টাখানেকের মধ্যে সড়কের পানি সরে যাওয়ায় নতুন বাজার সড়কের যানযট কমে চলাচল স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
নগরীর আকুয়া এলাকার রিক্সা চালক মো: আবুল কাশেম জানান, সকালে সাড়ে ৯টায় আকুয়া সিকদার বাড়ী থেকে বাতির কল যাত্রী নিয়ে এসেছিলাম। এরপর শুরু হয়, এতে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সারা শহরের সড়কে পানি জমে যায়।
এ সময় পানি পথে চলাচলে অসুবিধা হলেও যাত্রীরা খুশি হয়ে ভাড়া বেশি দিয়েছে। কিন্তু আমি অসুস্থ, বৃষ্টিতে ভিজলে সমস্যা, তাই অনেকক্ষণ আমি রিক্সা বন্ধ রেখেছি।
সরেজমিনে দেখা গেছে নগরীর পুরোহিত পাড়ার বাইলেন রোডে হাঁটু পানি জমে মানুষের বাসা-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ মন্দিরে ঢুকে পড়ে। একই অবস্থা নগরীর কৃষ্টপুর, ভাটিকাশর ও আউটার স্টেডিয়ামসহ অনেক এলাকার। নগরীর অটো চালক আলী হোসেন বলেন, নগরীর ড্রেনগুলো ময়লায় ভরে থাকে, তদারকি না থাকায় পানি না সরতে পেরে এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বাসিন্দা জানান, নগরীর শেওড়া, মাকরজানি এবং গোয়ালকান্দি খাল বেদখল করে ভরাট করে রেখেছেন প্রভাবশালীরা। পানি নিস্কাশনের জন্য এই খালগুলি অতি গুরুত্বপূর্ন।
এর আগে গত ১৭ জুন মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলেও জানান ভুক্তভোগীরা। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী মহল ও নাগরিক নেতাদের অভিযোগ, ড্রেন ও সকড় নির্মাণে পর্যাপ্ত বরাদ্ধ থাকলেও পরিকল্পিত ভাবে ড্রেন ও খাল খনন না করায় এবং সড়ক নির্মাণের সময় পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা সঠিক ভাবে না করায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো: ইউসুফ আলী বলেন, নগরীর অনেক গুলো এলাকায় ড্রেন ও সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান আছে। এই কাজগুলি সম্পুর্ন হলে জলাবদ্ধতা থাকবে না। আশা করছি আগামী বছরের মধ্যে নগরীর এই সমস্যার স্থায়ী সামাধান হয়ে যাবে।
এবিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো: ইকরামূল হক টিটু বলেন, বেশি বৃষ্টি হলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে উন্নয়ন কাজ চলমান আছে।
এ সময় তিনি জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ চিহ্নিত করে বলেন, নগরীর শেওড়া, মাকরজানি এবং গোয়ালকান্দি খাল ভরাট ও বেদখল হয়ে যাওয়া এই জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। তবে এই সমস্যা দূরীকরণে চার বছর মেয়াদী প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। খুব বেশি দিন নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাতে হবে না বলে আশা করছি।