শ্রীপুরে মা-ছেলে হত্যার রহস্য উদঘাটন
বুকের উপর বসে মা-ছেলেকে হত্যার পর ভারতে পালিয়েও রক্ষা পেল না ঘাতক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৭ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৫:৪২ পিএম, ৩০ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
গাজীপুরের শ্রীপুরে মা-ছেলে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে শ্রীপুর থানা পুলিশ। এঘটনায় গ্রেফতার যুবক পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। সে জানিয়েছে, শারিরিক সম্পর্কে বাধা দেয়ায় মায়ের বুকে উপর বসে মা-ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যার পর ভারতে পালিয়ে যায়।
আজ শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় শ্রীপুর থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কালিয়াকৈর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন। এসময় শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার এসআই আমজাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেফতার রহমত উল্ল্যাহ্ (২৯) গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের কুষদী গ্রামে গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।
কালিয়াকৈর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন, নিজ বাড়ির পাশে পেশায় রং মিস্ত্রী রহমত উল্ল্যাহ্ ভাড়া থাকতো। রুবিনার আধা পাকা বাড়িটি রং করার জন্য রং মিস্ত্রী রহমত উল্ল্যাহ্ কাছে যান রুবিনা। এতে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক তৈরী হয়। রুবিনার বাসায় বিভিন্ন সময় লোকজন আসতো, তা দেখে রহমত উল্ল্যাহ্ রুবিনার সাথে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। ঘটনার সাত দিন আগে রুবিনা রহমত উল্ল্যাহ্কে তলপেটে ব্যাথা করার কথা জানিয়ে ঔষধ কিনে এনে দেয়ার জন্য বলে। ফার্মেসী থেকে ৭দিনের জন্য ঔষধ কিনে এবং নিজে খাওয়ার কথা বলে দুটি ঘুমের ট্যাবলেট কিনে রুবিনার বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসে রহমত উল্ল্যাহ্। ৩ জানুয়ারি দুপুরে ১টায় রুবিনার বাড়ি গিয়ে তাকে ঘুমের ঔষধ খাওয়ায়। ওই দিন রাত ৮টায় রহমত শারিরীক সম্পর্কের জন্য রুবিনার বাসায় গেলে অর্ধঅচেতন অবস্থায় রুবিনাকে খাটের উপর শুয়ে থাকতে এবং জিহাদকে জেগে থাকতে দেখে।
রাত ১০টায় জিহাদ ঘুমিয়ে গেলে রুবিনার সর্ম্পকাতর জায়গায় হাত দেয় রহমত উল্ল্যাহ্। এসময় রুবিনা তাকে বাধা দেয়। পরে রুবিনার বুকে উপর বসে শারিরিক সম্পর্ক করার জন্য ধস্তাধস্তি করতে থাকলে হঠাৎ তাদের হাতটি ঘুমিয়ে থাকা জিহাদের গায়ের উপর গিয়ে পড়লে সে চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে বসে। জিহাদ যাতে চিৎকার করতে না পারে তাই সে ডান হাত দিয়ে জিহাদের গলা তার বুকের সাথে চেপে ধরে এবং বাম হাত দিয়ে রুবিনা গলা চেপে ধরে যাতে সেও চিকৎকার করতে না পারে। জিহাদ নিস্তেজ হয়ে গেলে সে মারা গেছে বলে সে বুঝতে পারে। এসময় তার চিন্তা হয়, সকালে রুবিনা স্বাভাবিক হয়ে উঠলে ঘটনাটি সবাইকে বলে দিবে, সেই ভয়ে রুবিনার বুকের উপর বসে গলা চেপে হত্যা করে রহমত উল্ল্যাহ্। এসময় তার ঘরে থাকা দুটি স্মার্ট ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা ২হাজার ৫শ টাকা ও রুবিনার পায়ের নুপুর নিয়ে বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে চলে যায়। ৭ জানুয়ারি ঘটনাটি জানাজানি হলে সে এলাকার মানুষদের সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমজাদ হোসেন জানান, মা-ছেলের মরদেহ উদ্ধারের পর কোন ধরনের কু¬ খুঁজে পাচ্ছিল না পুলিশ। নিহত রুবিনার স্বামীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তাতে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও হত্যার রহস্য জানতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় সোর্স নিয়োগ দেয়া হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে গোপালগঞ্জ থেকে রুবিনার মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে জানা যায় রহমত উল্ল্যাহ্ দালাল মাধ্যমে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, পুলিশী তৎপরতার পর রহমত উল্ল্যাহ্ ভারত চলে যায়, পরে কৌশলে দুই দেশের দালালদের মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে নিয়ে গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক এখলাস উদ্দিনের আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।