বরুড়ায় মিথ্যা মামলা থেকে নিস্তার চায় ৫ পরিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৪ পিএম, ২ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০১:৪১ এএম, ৩ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
কুমিল্লার বরুড়ায় শাহ আলম নামের এক ব্যক্তির দায়ের করা মিথ্যা মামলা থেকে নিস্তার চেয়েছে ৫টি পরিবার। কথায় কথায় মামলা দিয়ে হয়রানি, দায়ের করা সেসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অভিযুক্ত শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন পরিবারগুলো।
অভিযুক্ত শাহ আলম উপজেলার আড্ডা ইউনিয়নের ছোট পুটিয়া এলাকার মৃত দুধা মিয়ার ছেলে। তিনি ওমানে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করেন। ভুক্তভোগীরা একই এলাকার বাসিন্দা।
গতকাল শুক্রবার (১ নভেম্বর) দুপুরে এসব দাবি জানিয়ে ছোট পুটিয়া এলাকায় মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা বলেন, ছোট পুটিয়া এলাকার শাহ আলম একজন মামলাবাজ মানুষ। তিনি ওমানে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। একসময় দিনখাওয়া শাহ আলম টাকা হওয়ার পর এলাকার মানুষকে মানুষ মনে করেন না। দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন শাহ আলম আওয়ামী লীগের বড় একজন ডোনার ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে তিনি ওই এলাকার মানুষের ওপর জুলুম নির্যাতন শুরু করেন।
তারা বলেন, স্থানীয় শাহ আলমের চাচা শামসুল হকের ছেলে তারেককে ওমানে নিয়ে তার ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি দেন। ঠিকমতো বেতন না দেওয়ায় তারেক সেখানে তিন বছর চাকরি করার পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যান। তারেক সেখান থেকে চলে যাওয়ায় শুরু হয় শাহ আলমের মামলার হিড়িক। তারেক কেন তার কাছ থেকে চলে গেল শুধু এই অপরাধে দেশে থাকা তার বাবা শামসুল হক, বোন পারুল আক্তার, বোনের স্বামী নাদিম খন্দকার, চাচা মোতালেব, দূরের আত্মীয় মোস্তফা, প্রতিবেশি সোলাইমানসহ অন্তত ৫টি পরিবারের নামে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে ৭টি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলার পর মোটা অংকের অর্থ ব্যায় করে স্থানীয় সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা ও পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে আসছেন দিনের পর দিন। দায়ের করা এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মামলাবাজ শাহ আলমকে গ্রেপ্তারের জোর দাবি স্থানীয়।
ভুক্তভোগী শামসুল হক বলেন, আমি একজন বৃদ্ধ মানুষ। আমার ছেলে কেন তার কাছ থেকে চলে গেল সে কারণে নারী নির্যাতনসহ ৩টি মামলা দিয়েছে আমায়। অথচ আমি এসবের কিছুই জানি না। আমার পরিবারের একজন লোকও নেই মামলা বাদে। মামলার শোনানির দিন আদালতে গেলে সেখানে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেন কয়েক দফায়। তিনি বলেন, শাহ আলম দেশে এসে আমার ওপর হামলা করে গরম পানি ঢেলে দেন। আমি থানায় একটি মামলা দায়ের করি। কিন্তু শাহ আলম প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আমাদের সেই মামলার তদন্ত থামিয়ে দেন।
মো. মোতালেব নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, শাহ আলম আমার বড় ভাইকে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমি মিডিয়া হয়ে শাহ আলম আর আমার ভাইয়ের সমস্যা সমাধান করতে গেলে আমাকেও একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন। আমার ছেলেকে ভুয়া চেকের মাধ্যমে ৮৮ লাখ টাকার একটি মিথ্যা মামলা দেন।
নাদিম খন্দকার নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার শ্বশুরের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়ায় আমি শুধু জামাই হিসেবে উনার সাথে (শাহ আলমের) কথা বলতে গিয়েছিলাম। কথা একপর্যায়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে তিনি আমাকে তিনটি মিথ্যা মামলায় জড়ান। তার মধ্যে চট্টগ্রাম সাইবার ক্রাইম আদালতে একটি বাকিগুলো কুমিল্লার আদালতে।
মো. সোলাইমান নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, শাহ আলমের ভয়ে এখন আর এলাকার কেউ মুখ খোলে না। কেউ টু শব্দটি করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। মামলায় জর্জরিত হয়ে আমরা অসহায় হয়ে গেছি। শাহ আলম আমাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আমরা এসব মিথ্যা মামলা থেকে নিস্তার চাই। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দোসর শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ভুক্তভোগীরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন শাহ আলম মাসে মাসে দেশে আসতেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর শাহ আলম ওমানে যাওয়ার পর থেকে আর দেশে আসেননি।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত শাহ আলমের মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তার মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
বরুড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী নাজমুল হক বলেন, আমি এ থানায় গত মাসে জয়েন করেছি। এসব বিষয় আমার জানা নেই। যে মামলাটি শাহ আলমের নামে দায়ের করা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, আমি সেটির খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
দিনকাল/এমএইচআর