প্রয়োজনে বেশি ক্ষমতার অস্ত্র চালানোর নির্দেশ আইজিপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৮ এএম, ৯ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৩১ এএম, ৫ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, ভূমি অফিস, থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। এমনকি পুলিশের হাত থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসন উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনা কঠোরভাবে দমন করতে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।
তিনি বলেছেন, রাবার বুলেটে সহিংসতা দমানো না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র চালাতে হবে। একই সঙ্গে পুলিশকে মনোবল শক্ত রাখারও তাগিদ দেন তিনি।
পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে অংশ নিয়ে বুধবার আইজিপি এসব কথা বলেন। এতে দেশের সব মহানগর পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), মহানগর পুলিশের উপকমিশনার, জেলার পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) অংশ নেন। পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয়ে সভা চলে দেড়টা পর্যন্ত। বৈঠকে যুক্ত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বৈঠকে আইজিপি সহিংসতা দমনে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিপরীতে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা আইজিপিকে আশ্বস্ত করেছেন, তারা আগামী দিনগুলোতে কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তা আরও কঠোরভাবে মোকাবিলার ব্যবস্থা নেবেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি গণমাধ্যম ও পরিকল্পনা) হায়দার আলী খান গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, আইজিপি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নিয়ে সারাদেশের দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
দেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ ও সহিংসতায় গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত তিন দিনে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে গত সোমবারও ফরিদপুরের সালথায় উপজেলা কমপ্লেক্স ও থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এমনই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন আইজিপি।
ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আইজিপি বলেছেন, হেফাজতের সহিংসতায় বেশি গুলি চালানো হলেও পরিস্থিতি সেভাবে নিয়ন্ত্রণে ছিল না। তিনি সহিংসতায় কারা উসকানি দিয়েছে, কারা অংশ নিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন।
বৈঠকের একপর্যায়ে বেনজীর আহমেদ ফরিদপুরের সালথার ঘটনার বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার মো. আলীমুজ্জামানের কাছে জানতে চান। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ সুপার আইজিপিকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। তখন আইজিপি এসপির উদ্দেশে বলেন, আরেকটু ভালোভাবে চেষ্টা করলে ভালো হতো।
আইজিপি চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুর অঞ্চলে অথবা অন্য জেলায় আবার হামলা হতে পারে বলে উল্লেখ করে পুলিশকে তৎপর থাকার নির্দেশ দেন বলেও জানা গেছে। আইজিপির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে গত শনিবার হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের ঘেরাওয়ের প্রসঙ্গটিও আসে। তিনি বলেন, মামুনুলকে পুলিশের কাছ থেকেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তায় ঘাটতি ছিল। এ কারণেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার বিষয়ে পুলিশপ্রধান আরও বলেন, কোথাও পুলিশের ত্রুটি বা ঘাটতি ছিল কি না, এক জায়গায় পুলিশ সফল, আরেক জায়গায় কেন ব্যর্থ হয়েছে, তা তদন্ত করে বের করতে হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, আজ বৃহস্পতিবার সকালে মুন্সিগঞ্জের কলেজ মাঠে হেফাজত যে সমাবেশ ডেকেছে, তা না করতে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। হেফাজতের-নেতা কর্মী বা অন্য কেউ বাইরের জেলা থেকে যাতে মুন্সিগঞ্জে ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তাচৌকি বসাতেও বলা হয়। কোনো মাদ্রাসা খোলা থাকলে তা বন্ধ করার ব্যবস্থাও নিতে বলেন আইজিপি।
অভিযানে অংশ নেওয়ার আগে পুলিশ সদস্যদের হেলমেট পরা ও একা চলাফেরা না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয় বৈঠকে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পুলিশের কার্যক্রম নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।