করোনা-সহিষ্ণু গ্রাম মডেল শহরেও বাস্তবায়নের আহ্বান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৫ এএম, ১১ মে,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১১:২১ পিএম, ১৯ জানুয়ারী,রবিবার,২০২৫
করোনা-সহিষ্ণু গ্রাম মডেল শহরগুলোতে বিস্তৃত আকারে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
আজ সোমবার ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’ আয়োজিত করোনাভাইরাস সহিষ্ণু-গ্রাম সৃষ্টির অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা এ আহ্বান জানান।
ভার্চুয়াল এ সভায় সারাদেশের প্রায় ৫ শতাধিক কমিউনিটি সহায়ক অংশ নেন। সভার মূল উপস্থাপনায় জানানো হয়, করোনা সংক্রমণরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুসরণ করে ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’ গ্রামগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। তারা এই কার্যক্রমের আওতায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৪টি পরিবারকে সচেতন করেছে। এই কাজে প্রায় ১২০০ কমিউনিট সহায়ক নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ কার্যক্রমের আওতায় থাকা গ্রামগুলোতে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছিল। বেশিরভাগ গ্রামে করোনা ছড়াতে পারেনি। তারা সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। সভায় অংশ নিয়ে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এই মডেল শহরাঞ্চলে বিস্তৃত করতে হবে। এটা শহরে বাস্তবায়ন হলে এক মাসে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবার্তা পৌঁছানোর কাজটি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কথা খুবই কার্যকর। এই মুহূর্তে তিনটি কাজ খুবই প্রয়োজন। প্রথমত, করোনার সংক্রমণের নিম্নগামী ঢেউ ধরে রাখা, ঢেউ যেন না বাড়ে। যেসব কেস শনাক্ত হচ্ছে তাদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং আইসোলেশনে রাখা। সংক্রমণের চিহ্নিত উৎস থেকে সংক্রমণ রোধ করা।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাকসিন এই মুহূর্তে কম আছে। সবাই যেন নিতে পারে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা দরকার।
প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, এটা একটা সর্বাঙ্গীণ প্রোগ্রাম। এই প্রোগামটা যেভাবে করা হয়েছে তা সমস্ত গ্রামে করা গেলে সোনার গ্রাম করা যাবে। করোনা বাইরে থেকে আসছে। এর পথের দিকে নজর দিতে হবে। করোনা শহর থেকে আসে কিংবা চেকপোস্ট দিয়ে আসে। তাই এর উৎসে গিয়ে কাজ করতে হবে। গত এক বছরে আমাদের ব্যর্থতা আমরা এটা করতে পারিনি। শহরেও এমন প্রোগ্রাম চালু হওয়া দরকার। বর্তমানে শহর হচ্ছে করোনার নার্সারী। ঈদ কিংবা বিশেষ সময়ে করোনা বেশি ছড়ায়। সোনার গ্রামে সচেতনতামূলক থাকলে ঈদে মানুষ গ্রামে গেলেও ছড়াবে না। শহরে এ মডেল কার্যকর করতে পারলে সোনার বাংলাদেশ বলতে পারব।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, করোনা সহিষ্ণু-গ্রামে যারা কাজ করছেন বড় চোখে ছোট মনে হতে পারে। প্রত্যেকটি কাজই মূল্যবান। জনস্বাস্থ্য সমস্যায় জনসম্পৃক্ততা না থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দিয়ে বসে থাকলে কাজ হবে না। সকল করোনা রোগীর যদি কোয়ারিন্টিন ও আইসোলেশন নিশ্চিত করতে পারতাম। করোনা সহিষ্ণু গ্রামের মডেল শহরেও যদি চালু করা যায় তবে করোনা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোশতাক চৌধুরী বলেন, করোনা সহিঞ্চু গ্রামের মডেল বাস্তবায়নে অন্য সংস্থাগুলোরও এগিয়ে আসা দরকার। পাশাপাশি এটি পুরো বিশ্বের জন্য মডেল হতে পারে।
এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক রাশেদুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস সহিষ্ণু গ্রাম প্রোগ্রাম একটি চমৎকার উদ্যোগ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারকে সম্পৃক্ত করা এবং সত্যিকারের দরিদ্রদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেয়ার কাজ প্রশংসনীয়। এনজিও সরকারের প্রতিপক্ষ না, সহায়ক শক্তি। এটার বাস্তব উদাহরণ এই প্রোগ্রাম। আশা করব আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এই মডেল উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মুজাহেরুল হক বলেন, এই কার্যক্রম জাতির জন্য গর্বের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরু থেকে বলছে- কমিউনিটি অ্যাওয়ারনেস এন্ড এনগেজমেন্ট এই দুটো বিষয় জরুরি। এটা একটা আদর্শ উদ্যোগ। সরকারের উচিত পার্টনারশীপে এসে এই উদ্যোগ সারাদেশে বাস্তবায়ন করা।
সভায় দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারি শুধু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নয়, এটা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকির সমাধান করলে সব ঝুঁকি চলে যাবে। করোনা সহিষ্ণুু গ্রাম মডেলের মাধ্যমে এই ঝুঁকি হ্রাস সম্ভব। আমরা করোনা মোকাবিলায় শুধু অবকাঠামোগত সুবিধার চিন্তা করছি। কিন্তু এটার সঙ্গে সামাজিক সচেতনতাও জরুরি। সভায় কমিউনিট সহায়করা তাদের নিজ গ্রামে কিভাবে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করেছেন সে বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান।