থেমে যেতে পারে টিকাদান কর্মসূচি মজুত মাত্র সাড়ে ৫ লাখ ডোজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৯ এএম, ১৯ মে,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০১:০৭ পিএম, ১৭ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২৫
দেশে ২৯তম দিনে আজ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৬৪ হাজার ৩৭৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে নিয়েছেন ১৬ হাজার ২৫৬ জন। এ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩৮ লাখ ২১ হাজার ৪০০ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় মিলে টিকা দেয়া হয়েছে ৯৬ লাখ ৪১ হাজার ৩১২ ডোজ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিতরণ করা টিকা বাদ দিলে হাতে মজুত আছে মাত্র ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮৮ ডোজ। ঘাটতি টিকার পরিমাণ ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮২৪ ডোজ।
অন্যদিকে এ পর্যন্ত দেশে মোট প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৬ লাখ ৮ হাজার ৯৭৯ জন এবং নারী ২২ লাখ ১০ হাজার ৯৩৩ জন।
টিকা নেয়ার পর সামান্য পাশর্^প্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ১০০১ জনের। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এ তথ্য জানানো হয়। অন্যদিকে অনলাইনে নিবন্ধনও ২ মের পর থেকে বন্ধ রয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে গণ টিকাদান শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। আর দ্বিতীয় ডোজ শুরু হয় ৮ এপ্রিল থেকে। দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা এবং উপহার পাওয়া মিলে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ। এছাড়া এ মাসো ১২ তারিখে চীনের কাছ থেকে উপহার পাওয়া টিকার পরিমাণ ৫ লাখ ডোজ। যা আগামী ২৫ মে ঢাকায় ৪টি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হবে।
ভ্যাকসিনের সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে সরকার গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া বন্ধ রেখেছে। টিকা দেয়ার অনলাইন নিবন্ধণ প্রক্রিয়া ৫ মে থেকে বন্ধ আছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক বলেছেন, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও কুষ্টিয়া জেলায় ভ্যাকসিনের স্বল্পতার কারণে টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত করে রাখা হয়েছে। দেশজুড়ে স্থাপিত দুই হাজার ৫০০ টিকাদান কেন্দ্রের কয়টিতে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, তা তিনি জানাতে পারেননি।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের কেনা ভ্যাকসিনের চালান পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ার পর দেশব্যাপী শৃঙ্খলভাবে চলতে থাকা টিকাদান কর্মসূচি বিঘিœত হয়।
জানুয়ারি থেকে শুরু করে ছয় মাস ধরে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ভ্যাকসিনের চালান পাঠানোর কথা ছিল সেরামের। সেরাম চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ৫০ লাখ ডোজ পাঠিয়েছে, কিন্তু এরপর ফেব্রুয়ারিতে তারা মাত্র ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠায়। এরপর থেকে আর কোনো চালান আসেনি বাংলাদেশে।
ইতিমধ্যে ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে ভ্যাকসিন রফতানির ওপর বিধিনিষেধ দিয়েছে।
এ ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে সরকার টিকার বিকল্প উৎসের খোঁজে নামে এবং ভ্যাকসিনের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্যে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সরকার অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।
বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের যৌথ-উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে টিকার ডোজগুলো কিনে টিকাদান কর্মসূচিকে চলমান রাখার বিষয়ে বেশি আগ্রহী।
মন্ত্রী বলেছেন, ভ্যাকসিন উৎপাদন একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। যারা আবেদন (ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্যে) করেছে, তাদের (প্রতিষ্ঠান) বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর আমাদেরকে একটি প্রতিবেদন পাঠাবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি জানানো হবে, বলেন তিনি।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন শুরু করার জন্যে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগবে। আমরা এখন ভ্যাকসিন কেনার দিকে নজর দিচ্ছি, বলেন তিনি।
সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে ১৬ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার মাত্র দুই শতাংশ মানুষ অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের দুই ডোজই পেয়েছে, আর চার শতাংশেরও কম মানুষ গত রবিবার পর্যন্ত টিকার একটি ডোজ পেয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত মাসে জানিয়েছে, বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলো কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের বৈশ্বিক সরবরাহের সিংহভাগটি পেয়েছে, আর দরিদ্র দেশগুলো এক শতাংশেরও কম ভ্যাকসিন পেয়েছে।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. টেড্রস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেছেন, বিশ্বজুড়ে বিতরণ করা ৭০০ মিলিয়ন ডোজের মাঝে ৮৭ শতাংশ পেয়েছে উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো। আর নিম্ন আয়ের দেশগুলো পেয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক দুই শতাংশ।
১২ মে উপহার হিসেবে পাওয়া চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের পাঁচ লাখ ডোজ মেডিকেল শিক্ষার্থী ও নার্সদের টিকা দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে।
খুরশীদ আলম বলেন, আমাদেরকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যাতে মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা, বিশেষত যারা পঞ্চম বর্ষে আছে, তারা যেন দ্রুত টিকা পায়। আমরা এই মহামারি পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই মেডিকেল শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিঘœ সৃষ্টি করতে চাই না। কারণ তারাই আমাদের ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা।