করোনা শুধু ফুসফুসকে আক্রান্ত করে না, রক্তও জমাট বাঁধায়
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:১৩ এএম, ৯ মে,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩৩ পিএম, ১২ অক্টোবর,শনিবার,২০২৪
করোনাভাইরাস শুধু ফুসফুসকে মারাত্মকভাবে অকেজোই করে দেয় এমন নয়। একই সঙ্গে এই ভাইরাস প্রাণঘাতী হয়ে রক্তে জমাট বাঁধায়। নতুন নতুন গবেষণায় এমন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এ খবর দিয়েছে ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই। বিশেষজ্ঞরা এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণায় প্রথমে মনে করেছিলেন, করোনা শুধু ফুসফুসের রোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু এখন কিছু গবেষণায় থেকে দেখা যাচ্ছে, এই ভাইরাস দেহে রক্ত জমাট বাঁধায়। সঙ্গে সঙ্গে জমাট রক্ত সরিয়ে না ফেললে অঙ্গহানি হতে পারে। এমনকি মৃত্যু ঘটতে পারে মানুষের। বৈশ্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত যেসব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তার মধ্যে শতকরা ১৪ থেকে ২৮ ভাগের ক্ষেত্রে দেখা দেয় রক্ত জমাট বাঁধার মতো সমস্যা। একে বলা হয় ‘ডিপ ভেইন থ্রোমবোসিস’ (ডিভিটি)। অন্যদিকে শতকরা ২ থেকে ৫ ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে হৃদপিন্ডে ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি ভারত। তারা বলছেন, করোনা ভাইরাস যেমন রক্তের জালিকা বা ব্লাড ভেসেলকে আক্রান্ত করে, ঠিক একইভাবে সে ফুসফুসকে আক্রান্ত করে।
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শ্রীগঙ্গারাম হাসপাতালের ভাস্কুলার অ্যান্ড এন্ডোভাস্কুলার সার্জন ড. আমবারিশ স্বাতবিক বলেছেন, গড়ে এমন ৫ থেকে ৬ জন এমন রোগী পাচ্ছি আমরা। এ সপ্তাহে এমন জটিলতা দেখা গিয়েছে দিনে একটি। অন্যদিকে দিল্লির দক্ষিণপশ্চিমে আকাশ হেলথকেয়ারের কনসালট্যান্ট, কার্ডিও-থোরাসিক ভাস্কুলার ডিপার্টমেন্টের ড. অমৃত কুমার বলেন, যেসব রোগীর আগে থেকে ডায়াবেটিস মিলিটাস টাইপ ২ আছে তাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হলে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেশি থাকে। গত বছর নভেম্বরে বৃটিশ মেডিকেল জার্নাল ল্যানচেটের লেখকরা বলেন যে, তাদের গবেষণায় দেখা গেছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার মাধ্যমে থ্রোমবোয়েমবোলিজম (টিই) অথবা রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টির সম্পর্ক আছে। এর লেখকরা বলেছেন, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে টিই-এর হার অনেক বেশি এবং মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন এসব মানুষ।
ড. আমবারিশ স্বাতবিক বলেন, আমরা করোনা রোগীদের ওপর এক বছরের বেশি সময় গবেষণা করছি। যখন এই ভাইরাস প্রথমে চীনে দেখা দেয়, তারপর তা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমা দুনিয়ায়, তখন দেখা গেছে যে, এই ভাইরাস নিউমোনিয়া সৃষ্টি করে। এর মধ্যে মারাত্মকভাবে আক্রান্তের সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয় অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম (এআরডিএস) হিসেবে। এর ফলে রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু করোনায় মারা গেছেন এমন বেশ কিছু রোগীর শরীর ও ফুসফুসের ময়না তদন্তে দেখা গেছে, চিকিৎসকরা এক্ষেত্রে মৃত্যুর জন্য যে এআরডিএস’কে দায়ী করছেন পুরোটা তেমন কিছু নয়। উপরন্তু ফুসফুসের অতি আণুবিক্ষণীক রক্ত সঞ্চালনায় রক্ত জমাট বাঁধা শনাক্ত করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, করোনা ভাইরাস শুধু ফুসফুসের ক্ষতিই করে না। একই সঙ্গে সে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। করোনায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির রক্ত সংবহনতন্ত্র যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তা একটি প্রোটিন উৎপাদন করে। এই প্রোটিন আক্রমণ করে প্লেটলেটসকে। এসবের সঙ্গে অন্যান্য রক্ত জমাট বাঁধা ফ্যাক্টর একত্রিত হয়ে পুরোপুরি রক্ত জমাট বাঁধায়।
ড. অমৃস কুমার বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এমন রোগীদের মধ্যে শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগের ক্ষেত্রেই এই জটিলতা দেখা যায়। কারণ, শরীরের সব জায়গায়ই আছে রক্তের প্রবাহ বা ব্লাড ভেসেল। তাই দেহের যেকোনো স্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এসব ক্লট বা জমাট রক্ত রক্তের বড় বড় ভেসেলগুলোকে দখল করে নেয় এবং পরিণত হয় আণুবীক্ষণিক জমাট রক্তে। এ ছাড়া শরীরের অতি আনুবীক্ষণিক সংবহনতন্ত্রেও জমাট রক্ত গলে যেতে দেখা যায়।
এপ্রিলে ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড একটি গবেষণার ফল প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে করোনায় আক্রান্তের বেলায় বিরল এই রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি ১০০ গুন বেশি।